Gallery

Breaking

Wednesday 18 November 2020

বিলাসী

 লেখক পরিচিতি :

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
জন্ম- ১৮৭৬, পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে
মৃত্যু- ১৯৩৮, কলকাতায়
২৪ বছর বয়সে মনের ঝোঁকে সন্ন্যাসী হয়ে গৃহত্যাগ
জীবিকার তাগিদে দেশত্যাগ করে বর্মা মুলুকে/মায়ানমারে গিয়েছিলেন
প্রথম প্রকাশিত রচনা- ‘মন্দির’ (গল্প)। এই গল্পের জন্য তিনি ‘কুন্তলীন’ পুরস্কার পান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডি.লিট উপাধি দেয়- ১৯৩৬ সালে
নারীর প্রতিকৃতি অঙ্কনে অসামান্য দক্ষতা
গ্রন্থসমূহ:
উপন্যাস- দেবদাস, পল্লীসমাজ, চরিত্রহীন, শ্রীকান্ত, গৃহদাহ, দেনাপাওনা

প্রথম প্রকাশ- ভারতী, বৈশাখ সংখ্যা, ১৩২৫ বঙ্গাব্দ, ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ
  

চরিত্রসমূহ

ন্যাড়া- তার জবানিতে গল্প বলা হয়েছে
বিলাসী- প্রধান চরিত্র। সততা, শিকড় বিক্রি করতে তাই বাধা দিত।
মৃত্যুঞ্জয়- বিলাসীকে বিয়ে করে ব্রাহ্মণ থেকে সাপুড়ে হয়।
‘থার্ড ক্লাশে পড়িত। কবে সে যে প্রথম থার্ড ক্লাসে উঠিয়াছিল, এ কথা আমরা কেহই জানিতাম না... মৃত্যুঞ্জয়ের বাপ-মা, ভাই-বোন কেহই ছিল না, ছিল শুধু গ্রামের এক প্রান্তে একটা প্রকাণ্ড আম-কাঁঠালের বাগান, (কুড়ি-পঁচিশ বিঘার বাগান) আর তার মধ্যে একটা প্রকাণ্ড পোড়োবাড়ি, আর ছিল এক জ্ঞাতি খুড়া।...কত ছেলের বাপ কতবার যে গোপনে ছেলেকে দিয়া তাহার কাছে স্কুলের মাহিনা হারাইয়া গেছে, বই চুরি গেছে ইত্যাদি বলিয়া টাকা আদায় করিয়া লইত, তাহা বলিতে পারি না। কিন্তু ঋণ স্বীকার করা তো দূরের কথা, ছেলে তাহার সহিত একটা কথা কহিয়াছে, এ কথাও কোনো বাপ ভদ্র সমাজে কবুল করিতে চাহিত না- গ্রামের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয়ের ছিল এমন সুনাম।’
মধ্যে দশ-পনের দিন সে অচৈতন্য অবস্থায় পড়িয়াছিল
 
মৃত্যুঞ্জয়ের খুড়া- ‘খুড়ার কাজ ছিল ভাইপোর নানাবিধ দুর্নাম রটনা করা- সে গাঁজা খায়, সে গুলি খায়, এমনি আরও কত কি! তাঁর আর একটা কাজ ছিল বলিয়া বেড়ানো, ঐ বাগানের অর্ধেকটা  তাঁর নিজের অংশ, নালিশ করিয়া দখল করার অপেক্ষা মাত্র।’
 
মুখোপাধ্যায় মহাশয়- বিধবা পু্ত্রবধূকে কাশী থেকে নিয়ে আসে ও পরে সদব্রাহ্মণদের কাঁসার গেলাস উপহার দেয়
 
চার ক্রোশ হাঁটা বিদ্যা যে সব ছেলেদের পেটে, তারাই’ত একদিন বড় হইয়া সমাজের মাথা হয়। দেবী বীণাপাণির বরে সংকীর্ণতা তাহাদের মধ্যে আসিবে কী করিয়া।
ঠিক যেন ফুলদানিতে জল দিয়া ভিজাইয়া রাখা বাসী ফুলের মত, হাত দিয়া এতটুকু স্পর্শ করিলে, এতটুকু নাড়াচাড়া করিতে গেলেই ঝরিয়া পড়িবে।– বিলাসী সম্পর্কে
রাস্তা পর্যন্ত তোমায় রেখে আসব কি?- বিলাসী, ন্যাড়াকে
অন্ন পাপ। বাপ রে! এর কি আর প্রায়শ্চিত্ত আছে।
নালতের মিত্তির বলিয়া সমাজে আর তার মুখ বাহির করবার জো রহিল না।– মৃত্যুঞ্জয়ের জ্ঞাতি খুড়ো
‘বাবুরা, আমাকে একটিবার ছেড়ে দাও, আমি রুটিগুলো ঘরে দিয়ে আসি। বাইরে শিয়াল-কুকুরে খেয়ে যাবে- রোগা মানুষ সারা রাত খেতে পাবে না।’- বিলাসী
কিন্তু আসলে যা বিদ্যা- কামস্কাটকার রাজধানীর নাম কী এবং সাইবেরিয়ার খনির মধ্যে রূপা মেলে, না সোনা মেলে- এ সকল দরকারি তথ্য অবগত হইবার ফুরসতই মেলে না।
কাজেই একজামিনের সময় এডেন কী জিজ্ঞাসা করিলে বলি পারশিয়ার বন্দর, আর হুমায়ূনের বাপের নাম জানিতে চাহিলে লিখিয়া দিয়া আসি তোগলক খাঁ...
মধ্যে দশ-পনের দিন সে অচৈতন্য অবস্থায় পড়িয়াছিল
কিন্তু মিনিট কুড়ি পরেই যখন মৃত্যুঞ্জয় একবার বমি করিয়া দিল, তখন বিলাসী মাটির উপরে একেবারে আছাড় খাইয়া পড়িল। আমিও বুঝিলাম, বিষহরির দোহাই বুঝি বা আর খাটে না।
আমার মাদুলি-কবচ তো মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে কবরে গিয়াছিল, ছিল শুধু বিষহরির আজ্ঞা। কিন্তু সে আজ্ঞা যে ম্যাজিস্ট্রেটের আজ্ঞা নহে এবং সাপের বিষ যে বাঙ্গালীর বিষ নয়, তাহা আমিও বুঝিয়াছিলাম।
সে সাত দিনের বেশি বাঁচিয়া থাকাটা সহিতে পারিল না। (মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যুর সাত দিনের মাথায় সে আত্মহত্যা করলো, সাপের বিষ খেয়ে।)
অতিকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে, কিন্তু তেলাপোকা টিকিয়া আছে।
আমি ভূদেববাবুর পারিবারিক প্রবন্ধেরও দোষ দিব না এবং শাস্ত্রীয় তথা সামাজিক বিধি-ব্যবস্থারও নিন্দা করিব না।

শব্দার্থ ও টীকা :
মা-স্বরস্বতী- বিদ্যা ও কলার দেবী, বীণাপাণি
রম্ভার কাঁদি- কলার ছড়া
গুলি- আফিমের তৈরি একরকম মাদক
মালো- সাপের ওঝা, অনগ্রসর নিচু শ্রেণী
সত্যযুগ- হিন্দু পুরাণে বর্ণিত ৪ যুগের প্রথম যুগ
কলিযুগ- হিন্দু পুরাণে বর্ণিত ৪ যুগের শেষ যুগ
অকাল কুষ্মাণ্ড- অকর্মণ্য ব্যক্তি
নিকা- বিয়ে
প্রাতঃস্মরণীয়- অতি শ্রদ্ধেয়
মনসা- হিন্দু ধর্মের সাপের দেবী
কামাখ্যা- ভারতের আসামে অবস্থিত তীর্থস্থান
বহুদর্শী- অনেক দেখেছেন এমন, বহু অভিজ্ঞতাসম্পন্ন
অতিকায় হস্তী- মহাগজ, Mammoth
হুমায়ূন- মোঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা
ভূদেববাবু- ভূদেবচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ। অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা পরিচালক। গ্রন্থ- ‘পারিবারিক প্রবন্ধ’, ‘সামাজিক প্রবন্ধ’, ‘আচার প্রবন্ধ’ প্রভৃতি

No comments: