Gallery

Breaking

Sunday 19 January 2020

সাম্যবাদী










কবি পরিচিতি

জন্ম: ২৫শে মে, ১৮৯৯ সালমৃত্যু: ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ (৭৭ বছর)
সমাধি:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গন
জন্মস্থান: পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়ায়
জাতিসত্তা : বাঙালি বাংলাদেশী (১৯৭২-১৯৭৬)
ধর্ম: ইসলাম
দাম্পত্য সঙ্গী: প্রমিলা দেবী ,নার্গিস আসার খানম
পিতাকে হারান- আট বছর বয়সে।
লেটো দলে যোগ দেন- বারো বছর বয়সে। ডাক নাম:অন্য নাম দুখু মিয়া
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪) শুরু হওয়ার পর ১৯১৭ সালে ৪৯ নম্বর বাঙ্গালি পল্টনে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন।
পুরষ্কার: পদ্মভূষণ (ভারত সরকার)- ১৯৬০ সাল, একুশে পদক, জগত্তারিণী স্বর্ণপদকসহ অসখ্য পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হন।
মৃত্যু: ২৯শে আগষ্ট, ১৯৭৬ সাল 

মূলভাব


 কাজী নজরুল ইসলামের অসাম্প্রদায়িকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তাঁর সাম্যবাদী কবিতা।মানবাতার এমন উচ্চারণ খুব কম কবির কবিতায় দেখা যায়। সাম্যবাদী কবিতাটি সংকলন করা হয়েছে আব্দুল কাদির সম্পাদিত, বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত ‘নজরুল রচনাবলী’ থেকে। একটি বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক মানব সমাজ গঠনের গভীর প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছে এ-কবিতায়।কবি সাম্যের গান গেয়ে গোটা মানব সমাজ কে এক পতাকাতলে আনতে চান। কবি বিশ্বস করেন- কোনো সাম্প্রদায়িক পরিচয়ে পরিচিত না হয়ে মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে পরিচিত হয়ে ওঠাই গৌরবের। কবি নজরুলের জীবন ধারার এ- আদর্শ আজও প্রত্যেকটি সত্যিকার মানুষের জীবন-পথের পাথেয়। কিন্তু এখনও মানুষ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিয়ে মাতামাতি করছে। শোষন করছে একজন আরেকজনকে ।একজনের বিরুদ্ধে আরেকজনকে উস্কে দেয়া হচ্ছে।ধর্ম,বর্ণ আর গোষ্ঠির আজুহাতে মানুষ মানবতাকে পদদলিত করছে। একজন আরকেজনের কাছ থেকে যোজন যোজন দূরে সরে যাচ্ছে।নজরুল এ- কবিতায় সস্পষ্টভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন :সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’।বাইরের ধর্ম নয় অন্তর ধর্মেকে তাই তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন। ধর্মগ্রন্থ লব্ধ জ্ঞান যথোপযুক্তভাবে উপলব্ধি করতে হলে প্রয়োজন প্রগাঢ় মানবিকতাবোধ।মান ুষের হৃদয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোনো তীর্থ নেই-এ বিশ্বাস কবির স্বোপর্জিত অনুভব।এ কারণে কবি মানবিক মেলবন্ধনের এক অপূর্ব সংগীত পরিবেশন করতে বেশি আগ্রহী । সাম্যের এ-গানে মানুষে মানুষে সব ব্যবধান ঘূচে যাবে। মানবাতার সুবাস ছড়ানোর আত্মার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এ-জীবনকে পবিত্র করে তোলা সম্ভব-সাম্যবাদ কবিতায় এ-মর্মবাণী ঘোষিত হয়েছে।

সাম্যবাদী কবিতার বহুনির্বাচনী নমূনা প্রশ্ন

১।‘সাম্যবাদী’ কবিতাটি নজরুলের কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
  • ক) অগ্নিবীণা
  • খ) বিষের বাঁশি
  • গ) সাম্যবাদী
  • ঘ) চক্রবাক
২। জেরুজালেম কোথায়?
  • ক) জর্দানে
  • খ) সৌদি আরবে
  • গ) ফিলিস্তিনে
  • ঘ) ইরানে
৩। মহাবীর প্রতিষ্ঠিত ধর্মের নাম কী?
  • ক) পার্সি ধর্ম
  • খ) জৈন ধর্ম
  • গ) ইহুদি ধর্ম
  • ঘ) হিন্দু ধর্ম
৪। ‘পথে ফোটে তাজা ফুল’ এখানে ‘পথ’ বলতে বোঝানো হয়েছে—
  • ক) মহামানব
  • খ) ধর্মগ্রন্থ
  • গ) সাধারণ মানুষ
  • ঘ) পবিত্র জায়গা
৫। ‘আবেস্তা’ কিসের নাম?
  • ক) ধর্মগ্রন্থ
  • খ) ভাষা
  • গ) জাতি
  • ঘ) সম্প্রদায়
৬। ‘দেউল’ শব্দের সমার্থক হিসেবে কোনটি গ্রহণযোগ্য?
  • ক) মন
  • খ) অন্তর
  • গ) মন্দির
  • ঘ) হৃদয়
৭। কবি সাম্যের গান গেয়েছেন কেন?
  • ক) সাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনের জন্য
  • খ) অসম্প্রদায়িক সমাজ গঠনের জন্য
  • গ) মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টির জন্য
  • ঘ) নিজের আদর্শ প্রচারের জন্য
৮। বিশ্ব-দেউল কোনটি?
  • ক) বাড়ি
  • খ) হৃদয়
  • গ) স্থাপনা
  • ঘ) শরীর
৯। ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় ‘জেন্দা’ শব্দটি কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?
  • ক) জীবন্ত
  • খ) জাতি
  • গ) ভাষা
  • ঘ) ধর্মগ্রন্থ
১০। কাকে ‘বাঁশির কিশোর’ বলা হয়েছে?
  • ক) যিশুখ্রিস্টকে
  • খ) শ্রীকৃষ্ণকে
  • গ) গৌতম বুদ্ধকে
  • ঘ) মহাবীরকে
১১। মৃত পুঁথি-কঙ্কাল কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
  • ক) পুরনো বই-পুস্তক
  • খ) মানুষের কঙ্কাল
  • গ) অতীত ইতিহাস
  • ঘ) পুরনো ধ্যান-ধারণা
১২ নিজ প্রাণ খুলে দেখলে কি পাওয়া যাাবে ?
  • ক) সকল যুগাবতার
  • খ)সকল শাস্ত্র *
  • গ)সকল দেবতা
  • ঘ)পুথিঁ কঙ্কাল
১৩ বিভিন্ন যুগে অবতীর্ণ মহাপুরুষদের কী বলা হয় ।
  • ক)যুগাবতার *
  • খ)বিশ্ব দউল
  • গ)মহাপুরুষ
  • ঘ)শাক্যমুনি
১৪.কনফুসিয়াস কোান দেশের দার্শনিক ছিলেন?
  • ক. থােইল্যান্ড
  • খ. চীন
  • গ. ভিয়েতনাম
  • ঘ. জাপান

১৫.শ্রীকৃষ্ঞর মৃখনিঃসৃত বাণী কোনটি ?

  • ক.শ্রীমদ্‌ভগবদ্‌গীতা
  • খ.শ্রীমদ্‌ভগবদ্‌
  • গ. রামায়ন
  • ঘ.বেদ        
১. খ ২. গ ৩. খ ৪. গ ৫. ক ৬. গ ৭. খ ৮. খ ৯. গ ১০. খ ১১. ঘ, ১২ খ, ১৩ ক,১৪ খ ,১৫ ক,

সাম্যবাদী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন:  


বাংলা বিভাগের জননন্দিত শিক্ষক ড. মুহাম্মদ জিল্লুর রহমান। তিনি প্রায়শঃই ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের নানা বিষয় সম্পর্কে বলেন। প্রসঙ্গক্রমে একদিন তিনি বললেন- পৃথিবীতে যত মত আছে তত পথ থাকবেই। পৃথিবীতে অনেক ধর্ম, বর্ণ, জাত-পাত আছে। এ সবের ভিড়ে সবচেয়ে বড় ধর্ম মানব ধর্ম। কেননা তা কল্যাণকর ও মঙ্গলজনক। তিনি আরও বললেন, মানুষ যখন অন্যকে তার জাত-বর্ণ-ধর্ম অনুযায়ী যাচাই করে তখন সে আর মানুষ থাকে না। তাকে দিয়ে পৃথিবীর মঙ্গল সম্ভব নয়। তিনি বলেন,
মধ্যযুগের কবি চণ্ডীদাস বলেছেন
‘শোন হে মানুষ ভাই
সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’
(ক) কোন স্থানটি মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের নিকট সমভাবে পুণ্য স্থান?
(খ) ‘এই হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনো মন্দির কাবা নাই’- এই চরণে কবি কি বুঝিয়েছেন।
(গ) উদ্দীপকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কোন দিকটি তুলে ধরা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
(ঘ) ‘সাম্প্রদায়িকতার দেয়াল ভেঙে, ধর্মের সংকীর্ণতা থেকে বের হয়ে, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা সুন্দর-সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে পারব’। উদ্দীপক ও তোমার পঠিত ‘সাম্যবাদী ’ কবিতার আলোকে কথাটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তর - ক : ‘বায়তুল মোকাদ্দাস’ যা ফিলিস্তিনে অবস্থিত। এই স্থানটি মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের নিকট সমভাবে পুণ্যস্থান।
উত্তর - খ : বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী কবি, প্রেমের কবি, দ্রোহের কবি আর অসাম্প্রদায়িক মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি তার ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় মানব হৃদয় তথা মানব ধর্মকে সবার ওপরে স্থান দিয়েছেন। ধর্মের দোহাই দিয়ে একটি কায়েমী গোষ্ঠী মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে। মানুষের কল্যাণের জন্য ধর্মগ্রন্থ আর যুগাবতারদের আগমন ঘটে পৃথিবীতে। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের স্বতন্ত্র ধর্মীয় গ্রন্থে আছে, এ সব ধর্মের সারাংশ আমরা দেখি হিংস্রতা, দীনতা, ঘৃণা, বিদ্বেষহীন মানবসভ্যতা গড়ে তোলার প্রত্যয়। আমরা যদি এই সত্য নিয়ে সবার কাছে যাই তবেই এক সুন্দর ও মঙ্গলময় পৃথিবী গড়তে পারব। তাই কবি মানব হৃদয়কে যে কোনো পুণ্য স্থান থেকে অধিক পুণ্য বলেছেন।
উত্তর - গ : ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি জোর দিয়েছেন অন্তর ধর্মের ওপর, আবার উদ্দীপকেও আমরা মানব ধর্মের আহ্বান শুনতে পাই।
সাম্যবাদী চেতনায় বিশ্বাসী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে দৃঢ় প্রত্যয়ী। সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিয়ে যারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করছে, কবি তাদের উদ্দেশেই বলছেন- ‘এ হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির কাবা নাই’। এই কবিতায় কবি আমাদের মানবিকতাবোধ সম্পন্ন হতে আহ্বান জানিয়েছেন। রক্তাক্ত পৃথিবীর পাষাণ বেদিতে তিনি মানবতার সুবাস ছড়াতে চাচ্ছেন মানবিক মেলবন্ধনের এক অপূর্ব সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে।
উদ্দীপকে আমরা দেখি ড. জিল্লুর রহমান স্যার তার ছাত্রদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগাতে চান। তিনি তাদের বোঝাতে চান মানুষকে তার ধর্ম, বর্ণ, জাত-পাত দিয়ে বিচার করা উচিত নয়। বরং এক প্রেমপূর্ণ মানবধর্মবোধ থেকে শান্তি আসে। ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠীর দোহাই দিয়ে, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়ে একটি গোষ্ঠী মানুষকে পরস্পর থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে- যা বিশ্ব মানবতার জন্য চরম অপমানকর। তিনি বলতে চান মানুষ চাইলেই তার প্রেম-প্রীতি-সৌহার্দ্য দিয়ে পৃথিবীকে স্বর্গ বানাতে পারে। উদ্দীপকটি ‘সাম্যবাদী’ কবিতার এ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকেই ধারণ করে।
উত্তর - ঘ : মানবতার কবি তার অসাম্প্রদায়িক চেতনা দিয়ে বিশ্বভুবন থেকে অশুভ শক্তিকে তাড়াতে বদ্ধপরিকর। উদ্দীপকের অধ্যাপক মহোদয়ও একই সুবাস সবার মাঝে ছড়াতে চান।
পৃথিবীতে অনেক ধর্ম, অনেক জ্ঞান ভাণ্ডার কিন্তু নৈতিকতা একটাই। পৃথিবীর নানা প্রান্তে নানা বিশ্বাসী লোকের বাস। কিন্তু সবার মাঝেই মিলের জায়গা মানবতাবোধ। কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক মানব সমাজ গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বিশ্বাস করেন ‘সাম্যের গান’ গেয়েই গোটা মানব সমাজকে একত্রিত করা সম্ভব। কোনো নির্দিষ্ট ধর্মীয় বাণী দিয়ে তা সম্ভব নয়। কিন্তু এক অসৎ লোভী শ্রেণি মানুষকে মানুষের কাছ থেকে বিছিন্ন করার জন্য ব্যবহার করছে ধর্ম, করছে যুদ্ধ, মরছে মানুষ আর ভূলণ্ঠিত হচ্ছে মানবতা। কবি এ কবিতায় তাদের উদ্দেশ্যেই বলেছেন, সত্যিকার মানুষের জীবনপথের প্রেরণা হবে মানবধর্ম। মানুষকে জাত-পাত, বর্ণ দিয়ে নয় বরং মানুষ হিসেবে মূল্যায়নই হবে তার জন্য সম্মানের, মানব সমাজের জন্য মঙ্গলময়।
উদ্দীপকেও আমরা এক ভারসাম্যময় জগতের স্বপ্ন খুঁজে পাই- যেখানে মানুষ পরস্পরের মধ্যে সব ব্যবধান ঘুচিয়ে মিলিত হবে মানুষ হয়ে, কোনো গোষ্ঠীবদ্ধ বা সংকীর্ণ ধর্মীয় প্রেক্ষাপট থেকে নয়। এ বিরাট বিশ্বে সব প্রাণে সবখানে একই সুরে বেজে উঠবে মানবপ্রেমের সুর। তারা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অপশক্তির পরাজয় ঘটিয়ে শুভবুদ্ধির জাগরণ ঘটিয়ে আমাদের কল্যাণকর ও মঙ্গলময় এক পৃথিবীর বাসিন্দা করে তুলবে। মানবতার সুবাস ছড়ানো আত্মার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে মানবজীবনকে পবিত্রতম করে তোলা সম্ভব।
তাই আমাদের পঠিত ‘সাম্যবাদী’ কবিতা ও উদ্দীপকের আলোকে আমরা বলতেই পারি ‘সাম্প্রদায়িকতার দেয়াল ভেঙে, ধর্মের সংকীর্ণতা থেকে বের হয়ে, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে পারব’।

No comments: