Gallery

Breaking

Thursday 19 November 2020

শব্দের শ্রেণী বিভাগ

 

 শব্দ ও উৎস অনুসারে শব্দের শ্রেণী বিভাগ

শব্দঃ 
কয়েকটি বর্ণ বা অক্ষর পাশাপাশি বসে শব্দের সৃষ্টি করে। তবে এটাকে শব্দ বলা যাবে না। কারণ, শব্দ হতে হলে অবশ্যই শব্দের অর্থ থাকতে হবে। সুতরাং, বলা যায়, কয়েকটি বর্ণ বা অক্ষর পাশাপাশি বসে যদি কোন অর্থ প্রকাশ করে তবে তাকে শব্দ বলে। যেমনঃ ক+ল+ম=কলম।

উৎস বা উৎপত্তি অনুসারে শব্দের শ্রেণী বিভাগঃ 
বাংলা ভাষার শব্দকে উৎপত্তিগত দিক দিয়ে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এ ভাগগুলো হলো : 
তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দ।

১. তৎসম শব্দ:
সংস্কৃত ভাষার যে-সব শব্দ পরিবর্তিত না হয়ে সরাসরি বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকেই বলা হয় তৎসম শব্দ। 
উদাহরণ- চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ভবন, ধর্ম, পাত্র, মনুষ্য

২. অর্ধ-তৎসম শব্দ:
যে -সব সংস্কৃত শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় অর্ধ-তৎসম। 
জ্যোৎস্না>জ্যোছনা, 
শ্রাদ্ধ>ছেরাদ্দ, 
গৃহিণী>গিন্নী, 
বৈষ্ণব>বোষ্টম, 
কুৎসিত>কুচ্ছিত, 
মন্ত্র>মন্তর।

৩. তদ্ভব শব্দ:
যে সকল সংস্কৃত শব্দ প্রাকৃত ভাষার মাধ্যমে বাংলা ভাষায় স্থান লাভ করেছে সেগুলোকেই বলা হয় তদ্ভব শব্দ।
যেমন- সংস্কৃত ‘হস্ত’ শব্দটি প্রাকৃততে ‘হত্থ’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আর বাংলায় এসে সেটা আরো সহজ হতে গিয়ে হয়ে গেছে ‘হাত’। 

চন্দ্র>চন্দ>চাঁদ,  
গ্রাম>গাও>গাঁ,   
দধি>দহি>দই
 
৪.দেশি শব্দ:
বাংলা ভাষাভাষীদের ভূখণ্ডে অনেক আদিকাল থেকে যারা বাস করতো, সেইসব আদিবাসীদের ভাষার যে সব শব্দ বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকে বলা হয় দেশি শব্দ। এই আদিবাসীদের মধ্যে আছে- কোল, মুণ্ডা, ভীম, ইত্যাদি। যেমনঃ  কুড়ি (বিশ)- কোলভাষা, 
পেট (উদর)- তামিল ভাষা, 
চুলা (উনুন)- মুণ্ডারী ভাষা।
 ঢেঁকি, কুলা, ঝাঁটা

৫. বিদেশি শব্দ:
বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরা অন্য ভাষাভাষীর মানুষের সংস্পর্শে এসে তাদের ভাষা থেকে যে সব শব্দ গ্রহণ করেছে, বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারে অন্য ভাষার শব্দ গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় বিদেশি শব্দ বা সে সকল শব্দ বিদেশি ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে সেগুলোকে বিদেশি শব্দ বলে।
আরবি শব্দ : আল্লাহ, ইসলাম, ঈমান, ওযু, কোরবানি, কুরআন, কিয়ামত, গোসল, জান্নাত, জাহান্নাম, হওবা, হসবি, যাকাত, হজ, হাদিস, হারাম, হালাল
আদালত, আলেম, ইনসান, ঈদ, উকিল, ওজর, এজলাস, এলেম, কানুন, কলম, কিতাব, কেচ্ছা, খারিজ, গায়েব, দোয়াত, নগদ, বাকি, মহকুমা, মুন্সেফ, মোক্তার, রায়


ফারসি শব্দ: খোদা, গুনাহ, দোযখ, নামায, পয়গম্বর, ফেরেশতা, বেহেশত, রোযা, কারখানা, চশমা, জবানবন্দি, তারিখ, তোশক, দফতর, দরবার, দোকান,দস্তখত, দৌলত, নালিশ, বাদশাহ, বান্দা, বেগম, মেথর, রসদ
আদমি, আমদানি, জানোয়ার, জিন্দা, নমুনা, বদমাস, রফতানি, হাঙ্গামা


ইংরেজি শব্দ: প্রায় অপরিবর্তিত উচ্চারণে- চেয়ার, টেবিল
পরিবর্তিত উচ্চারণে- আফিম (opium), ইস্কুল (school), বাক্স (box), হাসপাতাল (hospitai), বোতল (bottle)


পর্তুগিজ শব্দ : আনারস, আলপিন, আলমারি, গির্জা, গুদাম, চাবি, পাউরুটি, পাদ্রি, বালতি

ফরাসি শব্দ : কার্তুজ, কুপন , ডিপো, রেস্তোঁরা

ওলন্দাজ শব্দ : ইস্কাপন, টেক্কা, তুরুপ, রুইতন, হরতন (তাসের নাম)

গুজরাটি শব্দ : খদ্দর, হরতাল
 

পাঞ্জাবি শব্দ : চাহিদা, শিখ

তুর্কি শব্দ : চাকর, চাকু, তোপ, দারোগা

চিনা শব্দ : চা, চিনি, লুচি

মায়ানমার/ বর্মি শব্দ : ফুঙ্গি, লুঙ্গি
 

জাপানি শব্দ : রিক্সা, হারিকিরি

মিশ্র শব্দ:
এছাড়াও আরেকটি বিশেষ ধরনের শব্দ আছে। দুইটি ভিন্ন ধরনের শব্দ সমাসবদ্ধ হয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে একত্রিত হলে ঐ নতুন শব্দটিকে বলা হয় মিশ্র শব্দ। এক্ষেত্রে যে দুইটি শব্দ মিলিত হলো, তাদের শ্রেণীবিভাগ চিনতে পারাটা খুব জরুরি। যেমন-
রাজা-বাদশা (তৎসম+ফারসি)
হাট-বাজার (বাংলা+ফারসি)
হেড-মৌলভী (ইংরেজি+ফারসি)
হেড-পন্ডিত (ইংরেজি+তৎসম)
খ্রিস্টাব্দ (ইংরেজি+তৎসম)
ডাক্তারখানা (ইংরেজি+ফারসি)
পকেট-মার (ইংরেজি+বাংলা)

No comments: