Gallery

Breaking

Monday 13 January 2020

মহাজাগতিক কিউরেটর




লেখক পরিচিতি


মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২৩এ ডিসেম্বর পিতার কর্মস্থল সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শহিদ ফয়জুর রহমান আহমেদ, জননী আয়েশা আখতার খাতুন। মুহম্মদ জাফর ইকবালের পৈতৃক নিবাস নেত্রকোনা জেলায়। তাঁর মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত হয় বগুড়ায়। ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাসের পর তিনি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে দেশে প্রত্যাবর্তন করে তিনি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়পক পদে নিযুক্ত হন।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল বাংলা ভাষায় রচিত সায়েন্স ফিকশন বা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির একচ্ছত্র সম্রাট। ‘কপোট্রনিক সুখ দুঃখ’ রচনার মাধ্যমে এ-ধারার সাহিত্য তাঁর প্রথম আবির্ভাব। বিজ্ঞানকে উপলক্ষ্য করে কল্পনার বিস্তারে অসামান্যতা তাঁর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তিনি একই সঙ্গে বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানী ও স্বপ্নচারী রোমান্টিক। তাঁর সাহিত্যে ও বিজ্ঞানের বস্তুনিষ্ঠা ও মানবীয় কল্পনার সম্মিলন ঘটেছে। মাতৃভূমি, মানুষ ও ধরিত্রীর প্রতি নৈতিকতা দায়বদ্ধতা তাঁর সাহিত্যিক মানসের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের বিজ্ঞানমুখী তরুণ-প্রজন্মের তিনি আইডল বা আদর্শ। কিশোর উপন্যাস এবং ছোটগল্প রচনাতেও তিনি দক্ষতার সাক্ষর রেখেছেন। কিশোর উপন্যাস ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ এবং ‘আমি তপু’ তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা। ‘মহাকাশে মহাত্রাস’, ‘টুকুনজিল’, ‘নিঃসঙ্গ গ্রহচারী’, ‘একজন আতিমানবী’, ‘ফোবিয়ানের যাত্রী’সহ অনেক পাঠকপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন বা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির তিনি সৃষ্টা। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞান লেখক হিসেবে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।



পাঠ-পরিচিতি



‘জলজ’ গ্রন্থের অন্তর্গত “মহাজাগতিক কিউরেটর” গল্পটি মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘সায়েন্স ফিকশন সমগ্র’ তৃতীয় খণ্ড (২০০২) থেকে গৃহীত হয়েছে। “মহাজাগতিক কিউরেটর” বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী হলেও এতে দেশকালের প্রভাবপুষ্ট মানবকল্যাণকর্মী লেখকের জীবনদৃষ্টির প্রতিফলন ঘটেছে। অনন্ত মহাজগৎ থেকে আগত মহাজাগতিক কাউন্সিলের দুজন কিউরেটর এর বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর নমুনা সংগ্রহে সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহ পৃথিবীতে আগমনের তথ্য দিয়ে গল্পটির সূচনা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণীর নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে দুজন কিউরেটরের সংলাপ বিনিময়ের মধ্য দিয়ে গল্পটি নাট্যগুণ লাভ করেছে। প্রজাতির যাচাই-বাছাই কালে পৃথিবীর নানা প্রাণীর গুণাগুণ কিউরেটরদের সংলাপে উঠে আসে। ‘মানুষ’ নামক প্রজাতি বিবেচনার ক্ষেত্রে কিউরেটর দুজনের বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা মূলত কল্পকাহিনীর লেখকেরও মনের কথা। দুজন কিউরেটর পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে মানুষের কারণেই হ্রাস ঘটে যাচ্ছে ওজোন স্তরের। মানুষই নির্বিচারে গাছ কেটে ধ্বংস করে চলেছে প্রকৃতির ভারসাম্য। পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে মানুষই নিউক্লিয়ার বোঝা ফেলছে একে অন্যের ওপর। এক পরিস্থিতিতেও তারা পৃথিবীর বুদ্ধিমান বলে কথিত। ‘মানুষ’ প্রজাতির নির্বুদ্ধিতায় তারা শঙ্কিত হয়। অবশেষে তারা পরিশ্রমী সুশৃঙ্খল সামাজিক প্রাণী পিঁপড়াকেই শনাক্ত করে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রজাতি হিসেবে। ডাইনোসরের যুগ থেকে এখনো বেঁচে থাকা সুবিবেচক ও পরোপকারী পিঁপড়াকে তারা পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী বিবেচনায় সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। কল্পকাহিনির রসের সঙ্গে সমাজ, পরিবেশ ও পৃথিবী সম্পর্কে সচেতন লেখকের তীব্র শ্লেষ ও পরিহাসের মিশ্রণ গল্পটিকে বিশিষ্ট করে তুলেছে।



শব্দার্থ ও টীকা


– মহাজাগতিক-  মহাজগৎ সম্বন্ধীয়।
– কিউরেটর - জাদুঘর রক্ষক। জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক তথা পরিচালক।
– প্রজাতি - প্রাণীর বংশগত শ্রেণি।
– এককোষী- একটি মাত্র কোষবিশিষ্ট্য প্রানী।
– সরীসৃপ - বুকে ভর দিয়ে চলে এমন প্রাণী।
– তেজস্ক্রিয় পদার্থ-যা থেকে এমন রশ্মির বিকিরণ ঘটে যা অস্বচ্ছ পদার্থের মধ্য দিয়ে দেখা যায়।
– ওজোন ও স্তরক-বয়ুমন্ডলের উপরিভাগে ওজোন গ্যাসে পূর্ণ স্তর বিশেষ, যা আমাদের সূর্যের অতিবেগুণি রশ্মি থেকে রক্ষা করে।
– নিউক্লিয়ার বোমা - পারমাণবিক বোমা।
– ডাইনোসর - লুপ্ত হওয় বৃহদাকার প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী।

– গ্যালাক্সি - ছায়াপথ।




বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর




মহাজাগতিক কিউরেটর
১। কিউরেটরদের কাছে কোন প্রাণীটি বেশ কৌতূহলোদ্দীপক?
ক. নীল তিমি খ. কচ্ছপ গ. সাপ ঘ. পিঁপড়া
২। ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পটিতে লেখক মানুষকে যে সম্পর্কে সচেতন হতে বলেছেন—
ক. সমাজ খ. পরিবেশ গ. পৃথিবী ঘ. অন্যান্য প্রাণী
৩। পিঁপড়ার খাবার জমিয়ে রাখার কারণ—
i. সুবিবেচক বলে ii. সংকটকালে খাদ্য গ্রহণ
iii. সুশৃঙ্খল বলে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
৪। গৃহপালিত প্রাণী হওয়ায় গরুর স্বাধীন কোনো স্বকীয়তা নেই। গরুর সঙ্গে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পের কার মিল রয়েছে?
ক. কুকুর খ. হরিণ গ. বাঘ ঘ. সিংহ
৫। ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে মানুষকে শ্রেষ্ঠ প্রাণীর স্বীকৃতি না দেওয়ার কারণ কী?
ক. অলসতা খ. অপরাধপ্রবণতা
গ. নির্বুদ্ধিতা ঘ. অসচেতনতা
৬। ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পটি কোন গ্রন্থের অন্তর্গত?
ক. জলজ খ. মহাকাশে মহাত্রাস
গ. টুকুন জিল ঘ. নিঃসঙ্গ গ্রহচারী
৭। ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে মানুষের বয়স কত বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে?
ক. এক মিলিয়ন খ. দুই মিলিয়ন
গ. তিন মিলিয়ন ঘ. চার মিলিয়ন
৮। মহাজাগতিক কিউরেটররা মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কেন?
ক. সভ্য হচ্ছে না বলে খ. জলাশয় ভরাট করছে বলে
গ. পৃথিবী ধ্বংস করছে বলে ঘ. বৃক্ষ নিধন করছে বলে
৯। ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে স্বেচ্ছাধ্বংসকারী প্রাণীর নাম কী?
ক. সাপ খ. মানুষ গ. বাঘ ঘ. কুকুর
১০। ‘মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী নয়’—কথাটি কোন যুক্তিতে বলা হয়েছে?
ক. মানুষ জন্মহার বাড়াচ্ছে
খ. মানুষের আগমন বেশি দিনের নয়
গ. মানুষ ওজোন স্তর শেষ করছে
ঘ. মানুষ বিলাসী জীবন যাপন করছে
১১। শীতের সময় কোন প্রাণীটি স্থবির হয়ে পড়ে?
ক. কেঁচো খ. মাছ গ. সাপ ঘ. প্যাঁচা
১২। ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে প্রাণের শুরু হয়েছে কোথা থেকে?
ক. অণুুকণা খ. ভাইরাস গ. ব্যাকটেরিয়া ঘ. জীবকোষ
১৩। গৃহপালিত পশু হওয়ায় কুকুর কী হারিয়েছে?
ক. স্বভাবের হিংস্রতা খ. স্বভাবের সাবলীলতা
গ. স্বভাবের স্বকীয়তা ঘ. স্বভাবসুলভ আচরণ
১৪। পৃথিবীর সব প্রাণীর এক রকম—
i. মূল গঠন ii. বিকাশ iii. ডিএনএ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
১৫। ‘আমি নিশ্চিত, মানুষ নিজেদের ধ্বংস করে ফেলার পরও এরা বেঁচে থাকবে’—উক্তিটি কাদের উদ্দেশে?
ক. মৌমাছির খ. পিঁপড়ার গ. সাপের ঘ. তিমির
১৬। মহাজাগতিক কিউরেটররা গাছপালা নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেনি কেন?
ক. বুদ্ধি নেই বলে খ. স্থির বলে
গ. স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে বলে
ঘ. আকারে বিশাল বলে
১৭। মহাজাগতিক কিউরেটররা বাঘকে অপছন্দ করার কারণ কী?
ক. মাংসাশী প্রাণী বলে
খ. একা থাকতে পছন্দ করে
গ. আকারে অনেক বড় বলে
ঘ. ওজন অনেক বেশি বলে
 বাকি অংশ ছাপা হবে আগামীকাল
সহকারী অধ্যাপক
সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, ঢাকা
উত্তর
বাংলা ১ম পত্র
মহাজাগতিক কিউরেটর
১. গ ২. ক ৩. ঘ ৪. ক ৫. গ ৬. ক ৭. খ ৮. গ ৯. খ ১০. গ ১১. গ ১২. খ ১৩. গ ১৪. ঘ ১৫. খ ১৬. খ ১৭. খ




সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর



১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট সকালবেলায় শান্ত ও সুন্দর হিরোসিমা নগরে আঘাত করল লিটল বয় নামক পারমাণবিক বোমা। শিশু, বৃদ্ধ আর প্রাকৃতিক পরিবেশের হাহাকারে বিশ্ব বিবেক সেদিন কেঁপে উঠল। বিশ্ববাসী পারমাণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তা দেখে অস্তিত্ব সংকটের কথা ভেবে ভয়ে আতংকে আঁতকে উঠল। শিল্পায়নের ফলে বাতাসে প্রতিনিয়তই কার্বন ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এভাবে পরিবেশের ওপর অত্যাচার চলতে থাকলে পৃথিবী এক সময় বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

(ক) প্রাণিজগতে একটু পিছিয়ে পড়া প্রাণী কোনটি?
(খ) ‘পৃথিবী এক সময় এরাই নিয়ন্ত্রণ করবে’ - উক্তিটি দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে?
(গ) ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে মানুষ ও পিঁপড়ার মধ্যে বৈসাদৃশ্যগুলো আলোচনা কর।
(ঘ) ‘মানুষই প্রেম করে সেই মানুষই খুন করে’- উদ্দীপক ও তোমার পঠিত ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্প অবলম্বনে আলোচনা কর।

উত্তর- ক : প্রাণিজগতে একটু পিছিয়ে পড়া প্রাণী সরীসৃপ।

উত্তর- খ : ‘পৃথিবী একসময় এরাই নিয়ন্ত্রণ করবে’- বলতে পৃথিবী নিয়ন্ত্রণে মানুষের দূরদর্শিতার অভাব এবং এর ফলে পিঁপড়া কর্তৃক পৃথিবী শাসনকে বোঝানো হয়েছে। ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ গল্পে নানা প্রজাতির যাচাই-বাছাইকালে পৃথিবীর নানা প্রাণীর দোষ-গুণ কিউরেটরদের সংলাপে উঠে এসেছে। কোনো এক পর্যায়ে তারা মানুষকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণী বলে চিহ্নিত করে। কিন্তু মানুষের নির্বুদ্ধিতা দেখে তাদের ভুল ভাঙে। তারা বলে মানুষ এখানে দুই মিলিয়ন বছর আগে জন্ম নিয়েছে... কিন্তু এরই মধ্যে পৃথিবীকে তারা বসবাস অনুপযোগী করে তুলেছে নানা ধ্বংসাত্মক ও আত্মঘাতী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। অন্যদিকে পিঁপড়া ডাইনোসরের যুগ থেকে বর্তমান। মানুষের মধ্যে যেসব ভালো দিক আছে পিঁপড়ার মধ্যেও এগুলো বিরাজমান; কিন্তু মানুষের মধ্যে যে খারাপ দিকগুলো আছে তা পিঁপড়ার মধ্যে অনুপস্থিত থাকার ফলেই মহাজাগতিক কিউরেটরদ্বয় ভাবছে একসময় এই ভালো গুণগুলোর জন্যই পিঁপড়া পৃথিবী শাসন করবে।

উত্তর- গ : বিজ্ঞানমনস্ক লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার মহাজাগতিক কিউরেটর গল্পে মানুষ ও পিঁপড়ার মধ্যে অনেক মিল দেখানোর পাশাপাশি বেশ কিছু বৈসাদৃশ্য দেখিয়েছেন।
মানুষ সামাজিক জীব। এরা দলবেঁধে থাকে। কিন্তু মাঝে মাঝে নিজেদের মধ্যে হানাহানি ও মারামারিতে লিপ্ত হয়। অন্যদিকে পিঁপড়াও একত্রে বসবাস করে। যার কাজ সে করে, কেউ কারো সঙ্গে কোনো হানাহানিতে লিপ্ত হয় না। মানুষের মধ্যে কেউ শ্রমিক, কেউ পেশাজীবী, কেউবা আবার বুদ্ধিজীবী। কিন্তু কেউ কারো মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। অন্যদিকে পিঁপড়া এদিক থেকে মানুষ থেকে ভিন্ন। মানুষ নিজেদের স্বার্থে পৃথিবীকে মনের মতো করে সাজিয়েছে। আবার মানুষই পৃথিবীকে ধ্বংস করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা সৃষ্টি করেছে। পিঁপড়া কেবল পৃথিবীকে সাজাচ্ছে কিন্তু মানুষের মতো করে কিছু ধ্বংস করছে না।
মানুষ অসম্ভব পরিশ্রমী। সে তার কল্পনাকে বাস্তবে রূপদান করতে পারে। সেই মানুষই আবার অন্যের স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। অন্যদিকে পিঁপড়াও পরিশ্রমী। নিজের শরীর থেকে দশগুণ বেশি জিনিস অনায়াসে বহন করতে পারে। মানুষ সুবিবেচক, সে ভবিষ্যতের কথা ভেবে কাজ করে। কিন্তু মাঝে মাঝে অদূরদর্শিতার অভাবে নিজের ও পৃথিবীর ক্ষতি সাধন করে। কিন্তু পিঁপড়া আগে থেকেই খাবার রাখে, বিপদে দিশাহারা হয় না এবং অন্যকে বাঁচানোর জন্য অকাতরে প্রাণ দিয়ে যায়। মানুষ প্রকৃতির এত ক্ষতি সাধন করছে যে, এক সময় এখানে টিকে থাকা তার জন্য কষ্টকর হবে। অন্যদিকে প্রকৃতির এতটুকু ক্ষতি করেনি পিঁপড়া। মানুষ নিজেদের ধ্বংস করে ফেলার পরও এরা বেঁচে থাকবে।

উত্তর- ঘ : মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সে তার কল্পনা শক্তি, মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে পৃথিবীকে বাস উপযোগী করে তুলেছে। একে অপরের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পৃথিবীকে স্বর্গে পরিণত করেছে। আবার এই মানুষই তার কর্ম দোষে পৃথিবীতে নরক যন্ত্রণা ভোগ করে। আমাদের পঠিত মহাজাগতিক কিউরেটর গল্পে আমরা দেখি, পৃথিবী নামক গ্রহে যে প্রাণীটি সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে তারা হচ্ছে মানুষ। মানুষ সামাজিক জীব। সে তার কর্মস্পৃহা, ধৈর্য, সাহস আর মেধার সমন্বয় ঘটিয়ে প্রকৃতিকে তার নিয়ন্ত্রণে এনেছে। নিজেদের সুবিধার্থে শহর, বন্দর, নগর তৈরি করেছে। পশুপালন জীবন ছেড়ে কৃষিভিত্তিক সমাজ উতরিয়ে সে এখন শিল্পায়ন ও নগরায়ণের পথে। এ সবের পেছনে রয়েছে তাদের আত্মত্যাগ, সৌন্দর্যবোধ, পারস্পরিক মমত্ববোধ, স্নেহ, প্রেম ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। এ সবের ফলে মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী প্রাণী। আবার মানুষই তার আবাস্থল নষ্ট করছে। বাতাসে দূষিত পদার্থ, তেজস্ক্রিয় পদার্থ ইত্যাদি ছড়িয়ে ওজনস্তর শেষ করে দিচ্ছে। গাছ কেটে বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংস করছে। একে অন্যকে নিউক্লিয়ার বোমা দ্বারা শেষ করে দিচ্ছে। সভ্যতা, প্রেম-প্রীতি আর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক এখন কল্পনার বিষয়। তারা সারাক্ষণ একে অন্যের ক্ষতি, ধ্বংস আর অমঙ্গলের কথা চিন্তা করছে। নিজেকে শক্তিশালী, মহাপরক্রমশালী প্রমাণ করার জন্য শিশুর মুখের হাসি, জ্ঞান বৃদ্ধের প্রজ্ঞাময় চিন্তা ধ্বংস করতে সদা তৎপর। পৃথিবীর সুন্দর জায়গাগুলো, ইতিহাস-ঐতিহ্য মুছে দিতে বদ্ধ পরিকর। মানুষের এরকম আচরণের ফলে সুন্দর এ পৃথিবী মানুষের কাছে নরকের বিভীষিকা নিয়ে এসেছে।
পঠিত গল্প ও উদ্দীপকের আলোকে আমরা বলতে পারি, পৃথিবীকে মনের মতো করে সাজিয়েছে মানুষ। আর এই সুন্দর ও শান্তিময় পৃথিবী বিনির্মাণের ক্ষেত্রে মানুষের সদিচ্ছা আর আগ্রহ একান্ত জরুরি। কেননা মানুষকে পৃথিবীকে শান্ত, সুন্দর ও মনোরম করে তুলতে হবে তার আগামী প্রজন্মের জন্য।


3 comments:

Maruf Mahmud Khan said...

স্যার অনেক উপকৃত হলাম।।
ধন্যবাদ।।😍

Maruf Mahmud Khan said...
This comment has been removed by the author.
Maruf Mahmud Khan said...

স্যার পরের টুকু কবে আসবে?
মারুফ খান